তাওহীদ কি ও তার উৎস
[ বাংলা ]
সংগৃহীত
তাওহীদ কিঃ
তাওহীদ অর্থ এক করা, এক বানানো, একএে যুক্ত করা, একএিত করা, একীকরণ(কোন
কিছুকে এক করা), একত্বের ঘোষণা দেওয়া বা একত্বে বিশ্বাস করা(to be alone, unique singular, unmatched,
without equal, incomparable)। তাওহীদ
শব্দটি আরবি ওয়াহাদা ক্রিয়ামূল থেকে গৃহীত, যার অর্থ এক হওয়া, একক হওয়া বা অতুলনীয়
হওয়া। তাওহীদ নামক এ পরিভাষাটি আল্লাহের একত্বে (তাওহিদুল্লাহ) ব্যাপারে ব্যবহৃত
হলে তা দ্বারা আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্রিয়াকলাপ
তথা ইবাদতে তার একত্ব উপলদ্ধি করা ও তা নিরবিচ্ছিন্নভাবে অক্ষুণ্ণ রাখা বুঝায়,
অর্থাৎ যা কিছু আল্লাহর জন্য সুনির্ধারিত ও সুনির্দিষ্ট সে সব ক্ষেত্রে আল্লাহর
একত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা। এই অর্থ তাওহিদুল্লাহর সব কয়টি শ্রেণীকে অন্তর্ভুক্ত করে
রাখে । তাওহীদের এই বিশ্বাসটি মূলত এ রকম যে আল্লাহ সুবানাহু অয়া তালা এক তার
কর্তৃত্বে ও প্রভুত্বে ( রবুবিয়াত) কোন
শরীক বা অংশীদার নেই , তার যাত ও গুণাবলীতে (আসমা
অয়া সিফাত) কোনই সদৃশ নেই তথা তিনি একক ও অতুলনীয় এবং ইলাহ রূপে সকল
প্রকার ইবাদত পাওয়ার যোগ্য হিসেবে তথা ইলাহ হওয়ার ক্ষেত্রে তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী
নেই(উলুহিয়াআত)।
তাওহিদী কালেমার ব্যাখ্যাঃ
আনাস ইবনু মালেক (রাদিয়াল্লাহু আনহু ) বলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়া সাল্লাম)
বলেন যে, “কোন ব্যক্তি যদি এই সাক্ষ্য প্রধান করে যে, আল্লাহ
ছাড়া কোন মাবুদ বা উপাস্য নেই (অন্য বর্ণনায় আছে যে ব্যাক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলল এবং আল্লাহ ব্যতিত অন্য
সব উপাস্য প্রত্যাখ্যান করলো) এবং মুহাম্মদ সা তার বান্দা ও রাসুল তবে তার জন্য আল্লাহ জাহান্নামের আগুন হারাম
করে দেবেন।”(মুসলিম আস সহিহ হা ১\৬১,৩৮)
আমরা দেখেছি যে, উপরের হাদিসে তাওহীদের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে (লা ইলাহ
ইল্লালাহ)আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ বা উপাস্য নেই। বিভিন্ন বর্ণনায় এর সাথে যুক্ত
হয়েছে তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। আমরা প্রথমে এ বাক্যটির বিভিন্ন শব্দের অর্থ
বুঝার চেষ্টা করব।
আরবিতে (লা) শব্দের অর্থ হল নেই, মোটেও নেই, একেবারে নেই । এই
বাক্যে শব্দটি মোটেও নেই, একেবারে নেই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ।
(ইলাহ) শব্দের অর্থ হল মাবূদ অর্থাৎ উপাস্য বা পূজ্য, যার কাছে মনের আকুতি পেশ
করা হয়, প্রয়োজন মেটানোর জন্য যার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। চতুর্থ হিজরি
শতকে প্রসিদ্ধ ভাষাবিধ ও অভিধান প্রনেতা আবুল হুসাইন
আহমদ ইবনু ফারাসি (৩৯৫হি) বলেনঃ হামযা, লাম ও হা= ইলাহা ধাতুটির একটিই মূল অর্থ তা হল ইবাদত করা। আল্লাহ
ইলাহ হবার কারন তিনি মাবূদ বা ইবাদতকৃত।(ইবনু ফারসি, মুজামু মাকাইসুল্লুগাহ ১\১২৭)
আরবি ভাষায় সকল পূজিত ব্যক্তি বস্তু বা দ্রব্যকেই ইলাহ বলা হয় । এজন্য সূর্যের আরেক নাম ইলাহাহ কারন কোন কোন সম্প্রদায় সূর্যের পূজা করত
(ইবনু ফারসি, মুজামু মাকাইসুল্লুগাহ ১\১২৭, রাগিব ইস্পাহানি, আল মুফরাদ পৃ ২১) মহান আল্লাহ বলেন, وَقَالَ الْمَلَأُ مِن قَوْمِ فِرْعَوْنَ أَتَذَرُ
مُوسَىٰ وَقَوْمَهُ لِيُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَآلِهَتَكَ ۚۚ قَالَ سَنُقَتِّلُ
أَبْنَاءَهُمْ وَنَسْتَحْيِي نِسَاءَهُمْ وَإِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُونَ [٧:١٢٧]
ফিরাউন সম্প্রদায়ের প্রধানগন বলল আপনি কি মুসাকে এবং তার
সম্প্রদায়কে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে এবং আপনার উপাস্যদেরকে বর্জন
করতে দিবেন? (সুরা ৭ আরাফ, আয়াত ১২৭)
ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এখানে “আলিহাতাকা ”এর স্থলে “ইলহাতাকা
” পড়তেন। ইলাহাতাকা অর্থ ইবাদত অর্থাৎ আপনি কি তাদেরকে আপনাকে এবং আপনার ইবাদত করা বর্জন করতে দিবেন?(তাবারি,
তাফসির জামিউল বয়ান ১\৫৪)এভাবে আমরা দেখছি ইলাহাহ শব্দটি আরবিতে “ইবাদাহ ” শব্দের সমর্থক।(ইবনু
মনজুর, লিসানুল আরব ১৩\৪৬৮-৪৬৯)
এই ইবাদতবা “ইবাদাহ ” শব্দের অর্থ
আমরা বাংলায় সাধারনভাবে উপাসনা বা পূজা বলতে পারি। তবে ইসলামের পরিভাষায় “ইবাদত ” অত্যান্ত
ব্যাপক অর্থবহ এবং এর বিভিন্ন প্রকার ও স্তর রয়েছে। পরবর্তীতে আমরা এ বিষয়ে কিছু
আলোচনা করব। আমরা আমাদের আলোচনায় সাধারনভাবে উপাসনা, পূজা ইত্যাদি শব্দের পরিবর্তে
“ইবাদাত ” ব্যবহার করব
যে,আমরা এই ইসলামী গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি সকল অর্থ ও ব্যবহার ভালভাবে বুঝতে পারি।
“ইল্লা ” শব্দের অর্থ
ব্যাতিত ছাড়া বা ভিন্ন ।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ” বাক্যটির অর্থ
আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই অর্থাৎ যদিও আল্লাহ ছাড়া অন্য অনেক কিছুকেই ইবাদত ,
উপাসনা, পূজা বা আরাধনা করা হয় তবে সত্যিকারভাবে ইবাদত করার যোগ্য বা মাবূদ হওয়ার
অধিকার একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারোই নেই। আল্লাহই সকল প্রকার ইবাদতের তিনি
একমাত্র অধিকারি। ইসলামের পরিভাষায় ইবাদত বলা হয় এমন সব কিছুই একমাত্র তার জন্য।
বিভিন্ন হাদিসে এই বাক্যের যোগ করা হয়েছেঃ “ ওহেদাহু লা শারীকালা হু
“। আমরা দেখেছি
যে, আরবিতে ওহেদাহু ক্রিয়াপদটির অর্থ এক হওয়া বা অতুলনীয় হওয়া।
(লা) শব্দের অর্থ হল নেই, মোটেও
নেই, একেবারে নেই।
“ শরীক ”অর্থ অংশীদার
বা সহযোগী। শব্দটি আরবি থেকে বাংলায় প্রবেশ করেছে এবং অংশীদার থেকে শরীক এখন বাংলা
ভাষায় অতি পরিচিত শব্দ। আরবিতে “শিরক “ অর্থ অংশীদার হওয়া (to share, participate, be partner, associate) । “ইশরাক ” ও “ তাশরীক ” অর্থ অংশীদার করা বা বানানো। সাধারনভাবে শরীক শব্দটিকেও
আরবিতে অংশীদার করা বা সহযোগী বানানো অর্থে ব্যবহার করা হয়।(আল ফাইযুমী, আল মিসবাহুল
মুনির পৃ ৩১০)
“ লাহু “ অর্থ তার বা
তার জন্য ।
এভাবে দেখছি যে, তাওহীদ ঘোষণা বা সাক্ষ্যের এই অংশের অর্থঃ মহান আল্লাহ একক
ও অতুলনীয়, তার কোন অংশীদার বা সহযোগী নেই।
তাওহীদের উৎস
বিশ্বাস বনাম জ্ঞানঃ
তাওহীদের একমাত্র ভিত্তি হল জ্ঞান। কোন বিষয়ে বিশ্বাস করতে হলে তাকে জনতে
হবে। বিশুদ্ধ তাওহীদ বা ঈমান বা বিশাসই যেহেতু দুনিয়া ও আখিরাতে মানবীয় সফলতার মুল
চাবিকাঠি সেহেতু তাওহীদ বা ঈমান বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করাই মানব জীবনের সর্বপ্রথম এবং
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ দায়িত্ব । কারণ
মহান আল্লাহ বলেন, فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا
إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ
وَالْمُؤْمِنَاتِ ۗ
وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ [٤٧:١٩]
অতএব তুমি জেনে রাখ যে, আল্লাহ ব্যতিত কোন
মাবুদ বা উপাস্য নাই। ( সুরা ৪৭ মুহাম্মদ আয়াত ৯)
আল্লাহ স্বয়ং নিজে তার বান্দের প্রতিপালক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনর আদেশ দিয়ে
বলেন,
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ
الَّذِي خَلَقَ [٩٦:١]
পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। (সুরা ৯৬ আলাক আয়াত
১)
রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়া সাল্লাম ) বলেন, জ্ঞান অর্জন করা
প্রত্যক মুসলমানের উপর ফরজ। ( সুনান ইবনে মাজা খণ্ড ১, হা\২২৪)
মোটকথা তাওহীদের জ্ঞান অর্জন খুবই প্রয়োজন নিজের তাওহীদ বা ঈমান গঠনের
জন্য। কেননা তাওহীদের জ্ঞান অসম্পূর্ণ থাকলে কোন জ্ঞানই সম্পূর্ণ হয় না। তাওহীদ
বিহীন কোন আমলই গ্রহন যোগ্য নয়।
মহান আল্লাহ বলেন, وَقَدِمْنَا إِلَىٰ
مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَّنثُورًا [٢٥:٢٣]
আর আমি তাদের আমলের দিকে অগ্রসর হব , অতপর তা ( তাওহীদ শুন্য হবার কারনে)
বিক্ষিপ্ত ধুলিকনার ন্যয় উড়িয়ে দিব।( সুরা ২৫ ফুরকান আয়াত ২৩)
তাওহীদী জ্ঞানের এক মাত্র উৎস অহিঃ
মানবীয় জ্ঞানের বিভিন্ন উৎস রয়েছে। লোকাচার, যুক্তি, অভিজ্ঞতা, দর্শন,
ল্যাবরটরির গবেষণা ইত্যাদির বিভিন্ন উৎস থেকে মানুষ জ্ঞান অর্জন করতে পারে। এখন
প্রশ্ন হল তাওহীদ, ঈমান, বিশ্বাস, ধর্ম বিশ্বাস বা আকিব্দা বিষয়ক জ্ঞানের উৎস কি?
আমরা জানি যে তাওহীদ, ঈমান বা ধর্ম বিশ্বাসের কেন্দ্র হল মহান আল্লাহ। সকল
যুগের মানব সমাজের ইতিহাস ও সভ্যতা পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, সকল যুগে
সকল দেশে সকল জাতির ও সমাজের প্রায় সকল মানুষই এই বিশ্বাস করেছে যে, এই বিশ্বের এক
জন সৃষ্টি কর্তা আছে। স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনা এমন ব্যক্তির সংখ্যা খুবই
কম। বর্তমান বিশ্বের শতশত কোটি মানুষের মধ্যেও অতি নগণ্য সংখ্যক মানুষের সন্ধান
পাওয়া যাবে যারা স্রষ্টায় বিশ্বাস করে না । এর মুলত কারন দুইটিঃ
প্রথমতঃ
স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস মানুষের জন্মগত ও প্রাকৃতিক অনুভূতি। আত্নপ্রেম,
পিতামাতা বা সন্তানের প্রতি আকর্ষণ ইত্যাদির মত স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস মানুষের
অস্থিমজ্জার সাথে মিশে আছে। মহান স্রষ্টা এই বিশ্বাসের অনুভূতি দিয়ে মানব আত্নকে
সৃষ্টি করেছেন। এ বিশ্বাস বিকৃত হতে পারে, একে অবদমিত করা যায়, তবে একে নির্মূল
করা যায় না। তাই যারা নিজেদের স্রষ্টায় বিশ্বাসী নয় তারা নন বলে নিজেদের দাবী করেন
তারাও মুলত মনের গভীরতম স্থান থেকে বিশ্বাসকে মুছে ফেলতে পারেননি, যদিও তারা
সর্বতোভাবে চেষ্টা করেন অবিশ্বাস করার।
দ্বিতীয়তঃ
এই বিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টাকে চেনার ও জানার নিদর্শন ও
প্রমান রয়েছে। তাই সৃষ্টির রহস্য ও সক্ষতা
সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যতই বাড়ছে , স্রষ্টার মহত্তের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ততই
গভীর হচ্ছে। সৃষ্টির রহস্য, জটিলতা, মানবদেহ, জীবজগত, গ্রহ- নক্ষত্র ইত্যদি বিশাল
সুশৃঙ্খল সুনিয়ন্ত্রিত বিশ্ব নিয়ে যারাই গবেষণা বা চিন্তাভাবনা করেছেন বা করছেন
তারাই স্রষ্টার মহত্তের উপলদ্ধিতে পরিপূর্ণ হচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন উঠে যে, সকল দেশের সকল মানুষ যখন এক স্রষ্টায়
বিশ্বাসে একমত তাহলে ধর্ম বা ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এত মতবিরোদ কেন ?
এর কারন স্রষ্টার অস্তিত্বে মুলত মতবিরোদ নেই। মতবিরোদ হয়েছে স্রষ্টার
প্রকৃতি, সৃষ্টির সাথে তার সম্পর্ক, স্রষ্টার প্রতি দায়িত্ব, তাকে ডাকার বা উপাসনা
করার পদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে। প্রত্যক মানুষই নিজের জন্মগত অনুভূতি দিয়ে এবং সৃষ্টির
দিকে তাকিয়ে তার জ্ঞান , যুক্তি ও বিবেক দিয়ে স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুভব করেন। তবে
তাকে কিভাবে ডাকতে হবে, কিভাবে তার প্রতি মনের আকুতি প্রকাশ করতে হবে, কিভাবে তার
সাহায্য নিতে হবে, কিভাবে করুণা বা সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে ইত্যাদি বিষয় মানুষের
যুক্তি, বিবেক বা গবেষণার মাধ্যমে জানতে বা বুঝতে পারে না। এক্ষত্রে মানুষ যখনই
নিজের ধারনা, যুক্তি বা কল্পনার অনুসরণ করে, তখনই মতবিরোদ সৃষ্টি হয় এবং মানুষ
বিভ্রান্তির শিকার হয়।
এজন্য মহান স্রষ্টা করুণাময় আল্লাহ
মানুষকে জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেক দিয়ে সৃষ্টির সেরা রূপে সৃষ্টি করার পরও তার পথ
প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে নবী রাসুল প্রেরন করেছেন।
মহান আল্লহ বলেন, وَلَقَدْ بَعَثْنَا
فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَআমি
প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসুল প্রেরণ করেছি (সুরা নাহল আয়াত ৩৬) তিনি যুগে যুগে
বিভিন্ন জাতি, সমাজ এবং জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে কিছু মহান মানুষকে বেছে নিয়ে তাদের
কাছে তার বাণী বা অহি প্রেরণ করেছেন। মানুষ যে সকল বিষয় জ্ঞান, যুক্তি , বিবেক এবং
গবেষণা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সঠিক ও
চূড়ান্ত সত্যে পৌছতে পারে না সে সকল বিষয় তিনি অহি বা প্রত্যাদেশের(Devine revelation/inspiration) মাধ্যমে শিক্ষা দান করেন।
কিভাবে আল্লাহ্র উপর ঈমান আনতে হবে, কিভাবে নবী রাসুলগনের, কিভাবে আল্লাহকে
ডাকতে হবে বা তার ইবাদত আরাধনা করতে হবে, সৃষ্টির সাথে তার সম্পর্ক কিরূপ মৃত্যুর
পর মানুষের কি অবস্থা হবে ইত্যাদি বিষয় বিশেষভাবে অহির মাধ্যমে বিস্তারিত শিক্ষা
দান করেছন। এ বিষয় গুলি ঈমান বা ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তি ।
এভাবে আমরা দেখেছি যে, ঈমান বা বিশাস বিষয়ক জ্ঞানের একমাত্র উৎস অহি (revelation)। এর জন্য কুরআন ও
হাদিসে একদিকে যেমন আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অহির মধ্যমে পাওয়া জ্ঞানের উপর ঈমান বা
বিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপন করতে বলা হয়েছে অপরদিকে তেমনই লোকাচার, কুসংস্কার,
সামাজিক প্রচলন, ধর্মগুরু বা পূর্বপুরুষদের শিক্ষা, অস্পষ্ট ভাসা ভাসা ধারনা বা
নিজের ব্যক্তিগত যুক্তি ও পছন্দের উপর বিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপন করতে বিশেষ ভাবে
নিষেধ করা হয়েছে । আল্লাহ্র পক্ষ থেকে প্রেরিত অহির জ্ঞান ছাড়া নিজের ধারনা,
মাতামত, সমাজের প্রচলন ইত্যাদির উপর নির্ভরতা মানুষের বিভ্রান্তি ও পথ ভ্রষ্টতার
অন্যতম কারন বলে কুরআনুল কারিমে বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে। এক স্থানে মহান আল্লাহ
বলেন, اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ
وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ [٧:٣]
তোমাদের
প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ কর এবং
তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবককে অনুসরণ করো না।(সুরা ৭ আরাফ আয়াত ৩)
অহির বিপরীতে অহিকে প্রত্যাখান করার ক্ষেত্রে যুগে যুগে মানুষের যুক্তি ও
প্রমান ছিল সামাজিক প্রচলন পূর্বপুরুষদের বিশ্বাস বা নিজেদের ব্যক্তিগত যুক্তি ও
পছন্দ। এই প্রবণতা বিভিন্ন মানব সমাজের বিভ্রান্তির মূল কারন হিসেবে কুরাআন মাজিদে
চিত্রিত করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন জাতির
কাছে যখন আল্লাহ্র নবী-রসুলগন সঠিক বিশ্বাস বা ইসলাম প্রচার করেন, তখন সেই জাতির
অবিশ্বাসীরা নবী রাসুলগনের আহ্বান এই যুক্তিতে প্রত্যাখান করেছেন যে তাদের
প্রচারিত বিশ্বাস সমাজের প্রচলিত বিশ্বাসের পরিপন্থী, তারা যুগ যুগ ধরে যা জেনে
আসছেন মেনে আসছেন তার বিরোধী। নূহ( আ) সম্পর্কে কুরআন কারিমে বলা হয়েছে فَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن قَوْمِهِ
مَا هَٰذَا إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُرِيدُ أَن يَتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْ وَلَوْ
شَاءَ اللَّهُ لَأَنزَلَ مَلَائِكَةً مَّا سَمِعْنَا بِهَٰذَا فِي آبَائِنَا
الْأَوَّلِينَ [٢٣:٢٤]
যে তিনি যখন তার উম্মতকে ইসলামের পথে আহ্বান করলেন তখন
তারা তার আহ্বান প্রত্যাখান করে এবং বলে আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এ কথা
শুনিনি।(সুরা ২৩ মুমিনুন আয়াত ২৪) মুসা (আ) যখন ফিরাউন ও তার সম্প্রদায়কে আল্লাহ্র পথে
আহ্বান করেন তখন তারাও একই যুক্তিতে তার উপর ঈমান আনতে অস্বীকার করে বলে, فَلَمَّا جَاءَهُم مُّوسَىٰ بِآيَاتِنَا بَيِّنَاتٍ قَالُوا مَا هَٰذَا
إِلَّا سِحْرٌ مُّفْتَرًى وَمَا سَمِعْنَا بِهَٰذَا فِي آبَائِنَا الْأَوَّلِينَ [٢٨:٣٦]
আমাদের
পূর্বপুরুষদের কালে কখনও আমরা এরূপ কথা শুনিনি।(সুরা ২৮ কাসাস আয়াত ৩৬)
সকল যুগের অবিশ্বাসীরা এ যুক্তিতেই অহি প্রত্যাখান করেছে। আল্লাহ বলেন, وَكَذَٰلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ فِي
قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا
عَلَىٰ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَىٰ آثَارِهِم مُّقْتَدُونَ [٤٣:٢٣]
এবং এভাবে আপনার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন সতর্ক কারী
প্রেরণ করেছি তখনই সে জনপদের সমৃদ্ধশালী (নেতৃপর্যায়ের) লোকেরা বলত, আমরা তো
আমাদের পূর্বপুরুষদের পেয়েছি এক মতাদর্শের উপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে
চলছি।(সুরা ৪৩ যুখরুফ আয়াত ২৩) রাসুল(সালল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কায়
ইসলাম প্রচার করেন তখন মক্কার অবিশ্বাসীরা এই একই যুক্তিতে তার আহ্বান প্রত্যাখান
করেন। কুরানুল কারিমের বিভিন্ন জায়গায় বারংবার তাদের এই যুক্তির কথা উল্লেখ করা
হয়েছে। (দেখুন, সুরা ৩১ লোকমান আয়াত ২১; সুরা ২৩
মুমিনুন আয়াত ৬৮; সুরা ৪৩ যুখরুফ আয়াত ২২) বস্তুত তারা যুগ যুগ ধরে
সমাজে প্রচলিত বিশ্বাস ও কর্ম ছাড়তে রাজি ছিলনা। তারা দাবি করত যে, ইব্রাহীম(আ),
ইসমাইল(আ), ও অন্যান্য নবী ও নেক কার মানুষের থেকে পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে
পাওয়া তাদের বিশ্বাসই সঠিক। তাদের মতের বিরুদ্ধে অহির মতকে
গ্রহণ করতে তারা রাজি ছিল না। আবার তাদের বিশ্বাসকে কোন অহির সূত্র দ্বারা প্রমান
করতেও রাজি ছিলনা। বরং তাদের বিশ্বাস বা কর্ম পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে নবী রাসুল বা
নেক কার মানুষদের থেকে প্রাপ্ত একথাটিই ছিল তাদের চূড়ান্ত দলিল ও যুক্তি। এ বিষয়ে
কুরানুল কারিমের বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা করা হয়েছে। এক স্থানে মহান আল্লাহ বলেন, وَجَعَلُوا الْمَلَائِكَةَ الَّذِينَ هُمْ عِبَادُ
الرَّحْمَٰنِ إِنَاثًا ۚ
أَشَهِدُوا خَلْقَهُمْ ۚ
سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْأَلُونَ [٤٣:١٩]
وَقَالُوا لَوْ شَاءَ
الرَّحْمَٰنُ مَا عَبَدْنَاهُم ۗ
مَّا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ ۖ
إِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ [٤٣:٢٠]
أَمْ آتَيْنَاهُمْ
كِتَابًا مِّن قَبْلِهِ فَهُم بِهِ مُسْتَمْسِكُونَ [٤٣:٢١
بَلْ قَالُوا إِنَّا
وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَىٰ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَىٰ آثَارِهِم مُّهْتَدُونَ [٤٣:٢٢]
তারা দয়া ময় আল্লাহ্র বান্দা ফিরিশতাগণকে নারী বলে গন্য
করেছে; তাদের সৃষ্টি তারা প্রত্যক্ষ করেছিল? তাদের
উক্তি লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদের জিজ্ঞেস করা হবে। তারা বলে দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা
করলে আমরা এদের পুজা করতাম না। এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই; তারা তো কেবল
আন্দাজ-অনুমান করে মিথ্যা বলছে। আমি কি তাদেরকে কুরআনের পূর্বে কোন কিতাব দান
করেছি যা তারা দৃঢ়ভাবে ধারন করে আছে? বরং
তারা বলে আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদের পেয়েছি এক মতাদর্শের উপর এবং আমরা তাদেরই
পদাঙ্ক অনুসরণ করে সুপথ প্রাপ্ত হব।(সুরা ৪৩ যুখরুফ আয়াত ১৯-২২)
এখানে মক্কার মানুষদের দুটি বিশ্বাসের পর্যালোচনা করা হয়েছে। প্রথমত
ফিরিশতাগণকে নারী বলে বিশ্বাস করা এবং দ্বিতীয়ত তাকদিরের বিশ্বাস বা আল্লাহ্র
ক্ষমতার বিশ্বাস বিকৃতি করে নিজেদের কর্মকে আল্লাহ্র নিকট পছন্দনীয় বলে দাবী করা।
অর্থাৎ আল্লাহ্র ইচ্ছা তো ছাড়া কিছুই হয় না; কাজেই আল্লাহর ইচ্ছা না হলে তো আমরা
ফেরেশতাদের পুজা করতাম না। অথবা আল্লাহ্র পবিত্র নগরীতে পবিত্র ঘরের মধ্যে আমরা
ফেরেশতাদের উপসনা করে থাকি। এ কর্ম যদি আল্লাহ্র নিকট পছন্দনীয় না হত তাহলে তিনি
আমাদের অবশ্যই শাস্তি প্রদান করতেন। যেহেতু তিনি আমাদেরকে শাস্তি দেন নি সেহেতু
আমরা বুঝতে পারি যে, এ কর্মে তিনি সন্তুষ্ট রয়েছেন। তাদের এ বিশ্বাসের বিষয়ে
কুরআনের বক্তব্য থেকে আমরা বুঝতে পারি যে বিশ্বাসের বিষয়টি গাইব বা অদৃশ্য জগতের
সাথে সম্পৃক্ত। দেখে, প্রত্যক্ষ করে বা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জ্ঞাত হয়ে এ বিষয়ে কিছুই
বলা যায় না। একমাত্র অহি ছাড়া এ বিষয়ে কিছুই বলা সম্ভব নয়। আর মক্কার মানুষদের এই
বিশ্বাস দুটি প্রমানের জন্য তারা পূর্বের কোন আসমানি কিতাব বা অহির প্রমান নিতে
অক্ষম ছিল। কারন তাদের নিকট এরূপ কোন গ্রন্থ ছিলনা । তাদের বিশ্বাসের ভিত্তি ছিল দ্বিবিধ
; অহির জ্ঞানের ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা। দ্বিতীয়ত পূর্বপুরুষদের দোহাই দেওয়া। প্রথম
বিষয়টি হচ্ছে সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন যে, তারা স্পষ্ট দ্ব্যর্থ হীন কোন অহির বাণী
এক্ষেত্রে পেশ করতে পারে না; বরং আন্দাজে আল্লাহ্র সম্পর্কে মিথ্যা বলে। দ্বিতীয়
বিষয়টি কুরআনে বিভিন্নভাবে খণ্ডন করা হয়েছে। প্রথমত পূর্বপুরুষদের অনেকেই সত্যিই নেককার ছিলেন বা
নবী রাসুল ছিলেন। তবে তাদের নামে যা প্রচলিত তা সঠিক কিনা তা যাচায় করা সম্ভব নয়।
কজেই তাদের দোহাই নাদিয়ে সু পষ্ট অহির নির্দেশনা মত চলতে হবে। এ বিষয়ে কুরানুল
কারিমের বিভিন্ন জায়গায় ইব্রাহীম(আ), ইসমাইল(আ), ইসহাক(আ), ইয়াকুব(আ) ও অন্যান্য
নবী রাসুলগনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে
تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ
خَلَتْ ۖ
لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُم مَّا كَسَبْتُمْ ۖ وَلَا تُسْأَلُونَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ [٢:١٣٤] সে সকল মানুষ অতীত হয়েছে, তারা যা অর্জন
করেছে তা তাদের। তোমরা যা অর্জন কর তা তোমাদের। তারা যা করত সে সম্পর্কে তোমাদের
কোন প্রশ্ন করা হবে না।(সুরা বাকারা ১৩৪, ১৪১) অন্যান্য স্থনে আল্লাহ উল্লেখ করে
করেছেন যে পূর্ববর্তী পূর্বপুরুষদের মধ্যে অনেকেই অজ্ঞ ও বিভ্রান্ত ছিলেন। কাজেই
অহির বিপরীতে এদের দোহাই দেওয়া বিভ্রান্তি বৈ কিছুই নয়।
আল্লাহ বলেছেন, وَإِذَا
قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا
أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا ۗ
أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ [٢:١٧٠]
যখন তাদেরকে বলা হয় আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা তোমরা
অনুসরন কর তখন তারা বলে, না না আমরা বরং আমাদের পিতা পিতামহদেরকে যে কর্ম ও
বিশ্বাসের উপরে পেয়েছি তারই অনুসরণ করে চলব। এমনকি তাদের পিতা-পিতামহগন যদিও কিছু
বুঝত না এবং তারা সৎপথেও পরিচালিত ছিল না, তথাপিও? (সুরা ২
বাকারা আয়াত ১৭০)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন যে, পূর্বপুরুষগন কেমন ছিলেন সে
কথা নিয়ে বিতর্ক না করে মূল ধর্ম বিশ্বাস বা কর্ম নিয়ে চিন্তা কর। যদি
নবী-রাসুলগনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অহির জ্ঞান প্রচলিত বিশ্বাস বা কর্মের চেয়ে উত্তম
হয় তবে পিতৃ পুরুষদের দোহায় দিয়ে তা প্রত্যাখান করো না। মহান আল্লাহ
বলেন, (হে নবী) বলেন, তোমরা তোমাদের
পূর্বপুরুষদের যে পথে পেয়েছ আমি যদি তোমাদের
জন্য তার চেয়ে উৎকৃষ্ট পথ আনায়ন করি তবুও কি তোমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ
করবে? তারা বলে তোমরা যা সহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা
প্রত্যাখান করি। ( সুরা ৪৩ যুখরুফ আয়াত ২৪)
অহির বিপরীতে অবিশ্বাসীদের এরূপ ধারনা, কল্পনা, বা আন্দাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
যারা শিরক করেছে তারা বলবে, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন
তবে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষগন শিরক
করতাম না এবং কোন কিছুই নিষিদ্ধ করতাম না। এভাবে তাদের পূর্ববর্তীগনও অবিশ্বাস
করেছিল, অবশেষে তারা আমার শাস্তি ভোগ করেছিল।বলুন তোমাদের নিকট কোন ইলম (জ্ঞান) আছে
কি? থাকলে আমাদের নিকট পেশ কর। তোমরা শুধু
ধরনার অনুসরন কর এবং তোমরা শুধু অনুমান নির্ভর মিথ্যা কথাই বল।(সুরা ৬ আনআম আয়াত
১৪৮)
এখনে তাকদিরে বিশ্বাস বা আল্লাহ্র ক্ষমতার বিশ্বাসকে বিকৃত করে তারা যা বলছে তাকে
আন্দায ,ধারনা বা কল্পনা বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং এর বিপরীতে তাদের নিকট তাদের
বিশ্বাসের ও দাবির স্বপক্ষে ইলম বা সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন অহির বক্তব্য দাবী করা
হয়েছে। মহান আল্লাহ অন্যস্থনে বলেন, যদি তুমি
দুনিয়ার অধিকংশ মানুষের অনুসরণ কর তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহ্র পথ থেকে বিভ্রান্ত
করবে; তারা অন্যত্র আল্লাহ বলেন, অন্যত্র আল্লাহ বলেন, অধিকাংশ মানুষই কেবলমাত্র
ধারনা কল্পনার অনুসরণ করে চলে এবং তারা শুধু মাত্র অনুমানের উপর নির্ভর করে। (সুরা
৬ আনআম আয়াত ১১৬)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, অধিকাংশ মানুষই কেবলমাত্র
ধারনা কল্পনার অনুসরণ করে চলে। বস্তুত সত্যকে জানার জন্য ধারনা কোন কাজে আসেনা।
সুরা ১০ ইউনুস আয়াত ৬৬)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, যারা আখিরাতে বিশ্বাস
করেনা তারা ফেরস্তাদের নারী বাচক নাম দিয়ে থাকে ।
এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই তারা কেবলমাত্র ধারনা কল্পনার অনুসরণ করে;
সত্যের মোকাবেলায় ধারনা অনুমানের কোন মুল্য নেই। (সুরা ৫৩ নাজম আয়াত ২৭-২৮)
এছাড়া এরূপ বিশ্বাসকে প্রবৃত্তির অনুসরণ বা নিজের মন মর্জি বা ব্যক্তিগত পছন্দ
অপছন্দের অনুসরণ বলে অভিহিত করা হয়েছে । অর্থাৎ আমার কাছে পছন্দের কাজেই আমি এই মত
গ্রহণ করলাম এবং আমার কাছে পছন্দ নয় কাজেই আমি এই মত গ্রহন করলাম না । আমার পছন্দ
বা আপছন্দ আমি অহি দ্বারা প্রমান করতে
বাধ্য নয়।
নিঃসন্দেহে গাইব বা অদৃশ্য জগত সম্পর্কে অহির বাহিরে যা কিছু বলা হয় সবই
ধারনা, অনুমান, আন্দায বা কল্পনা হতে বাধ্য। আর সু স্পষ্ট দ্ব্যর্থ হীন বিবেক ও
যুক্তি গ্রাহ্য অহিকে প্রত্যাখ্যন করে এরূপ আন্দায বা ধারনা কে বিশ্বাসের ভিত্তি
হিসেবে গ্রহণ করা বা পূর্ব পুরুষদের দোহাই দিয়ে অহিকে অস্বীকার বা প্রত্যাখান করা
নিজের মর্জি বা প্রবৃত্তির অনুসরণ বৈ কিছুই নয় ।
এ বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, যে ব্যাক্তি আল্লাহ্র
পক্ষ থেকে প্রেরিত পথ নির্দেশ ছাড়া নিজের ইচ্ছা বা মতামতের অনুসরণ করে তার চেয়ে
অধিক বিভ্রান্ত আর কেউ নয়। নিশ্চয় আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না ।(সুরা
২৮ কাসাস আয়াত ৫০) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, তারা
তো শুধু মাত্র অনুমান ও নিজের প্রবৃত্তির ই অনুসরণ করে। কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।( সুরা ৩০ রুম ২৯, সুরা আরাফ ১৭৬ সুরা কাহাফ ২৮ সুরা তাহা ৪৭
আয়াত)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন