বিবাহ (দারস-৮)

অধ্যায়ঃ বিবাহ
দারস-৮
বিয়ের প্রস্তাবকারীর প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখা শরীয়ত সম্মতঃ
৯৭৭. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একজন মহিলাকে বিবাহ করতে যাচ্ছেন এমন একজন সাহাবীকে নাবী (সাঃ) বললেন, তুমি কি মেয়ে কে দেখেছ? সাহাবী বললেনঃ না। তিনি বললেনঃ যাও, তাকে গিয়ে দেখ। (মুসলিম ১৪২৪, নাসায়ী ৩২৩৪ আহমাদ ৭৭৮৩, ৭৯১৯)
ব্যাখ্যাঃ
এ হাদিসে হুকুম ওজুবের জন্যে নয়, জাওয়াযের জন্যে যেমন পূর্ব হাদিসে এটা স্পষ্ট হয়েছে। এ দেখা বিবাহের পয়গাম দেয়ার পূর্বে হতে হবে। কেননা যদি নাকচ করে দেয় তবে মেয়ে পক্ষদের কষ্টের কারন হতে পারে ।
উপরিউক্ত দুইটি হাদিসের(৯৭৪ ও ৯৭৭) আলোকে যা আলোচ্য তা হলঃ পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্র যা দেখবে তা হল, পাত্রীর চেহেরা ও কব্জি পর্যন্ত হস্তদ্বয়। অন্যান্য অঙ্গ দেখা বৈধ নয়। কারন এমনিতেই কোন গম্যা নারীর প্রতি দৃষ্টিপাতই হারাম। তাই প্রয়োজনে যা বৈধ, তা হলো পাত্রীর ঐ দুই অঙ্গ। এই দর্শনের সময় পাত্রীর সাথে যেন তার বাপ বা ভাই বা কোন মাহরম থাকে। তাকে পাত্রের সহিত একাকিনী কোন রুমে ছেড়ে না দেয়। যদিও বিয়ের কথা পাক্কা হয়। পাত্র যেন কাম নজরে না দেখে।(মুগনী ৬/৫৫৩) আর দেখার সময় তাকে বিবাহ করার যেন পাক্কা ইরাদা থাকে। পাত্রী কে পরিচয় জিজ্ঞেসা করা বৈধ। তবে লম্বা সময় দিয়ে বসে থাকা এবং বার বার দৃষ্টি পাত করা বা দীর্ঘক্ষণ চেয়ে থাকা বৈধ নয়। অনুরুপ একবার দেখার পর আরেকবার দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ নয়।(দলীলিত তালিব ফি হুকমি নযরিল খাতিব, মুসাইদ আল ফালিহ) পাত্রীর গলায় পাত্র নিজে হার পরানো বা হাত ধরে ঘড়ি বা আংটি পারানো হারাম। পয়গামের আংটি বলে কিছু নেই। এমন আংটি পরানো কে শুভঅশুভ কিছু মনে করা শিরক ও বিদআত। যা পাচাত্য সভ্যতার রীতি।( আফিক্কী ইয়া ফাতাতাল ইসলাম ১০ পৃঃ আদাবুয যিফাক আলবানী ২১২ পৃ:) পাত্রের বাড়ীর যে কোন মহিলা পাত্রী এখতে পারবে। তবে পাত্র ছাড়া অন্য কোন পুরুষ দেখতে পারে না; পাত্রের বাপ চাচাও না। পাত্র ও প্ত্রী পক্ষের উচিত একমাত্র পাত্র ছাড়া অন্য কোন পুরুষ্কে পাত্রীর চেহেরা না দেখনো। নয়লে সবাই গোনাহগার হবে। পাত্রী দেকার আগে বা পরের বাড়ীর লোককে দেখনোর জন্য পাত্রীর ফটো বা ছবি নেয়া ও পাত্রী পক্ষের তা দেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। বিশেষ করে বিবাহ না হলে ছবি র‍যে যাবে এ বেগানার হাতে। নাবী সাঃ বলেনঃ “যখন তোমাদের কেউ কোন রমনীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাবের জন্যই দেখে নেয় তবে তা দূষনীয় নয়; যদিও ঐ রমণী তা জানতে না পারে।”(সিলসিলা সহিহা ৯৭) সাহাবী জাবের বিন আবদুল্লাহ বলেন, “আমি এক তরুণীকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তাকে দেখার জন্য লুকিয়ে থাক্তাম।শেষ পর্যন্ত আমি তার সেই সৌন্দর্য দেখলাম যা আমাকে বিবাহ করতে উৎসাহিত করল। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করলাম।( সিলসিলা সহিহা ৯৯) পাত্রীর আভিভাবককে না জানিয়ে লুকিয়ে দেখা বৈধ। তবে এমন স্থান থেকে লুকিয়ে দেখা বৈধ নয় যেখনে সে তার একান্ত গোপনীয় অঙ্গ প্রকাশ করতে পারে। পাত্রী দেখার সময় কোন দিক দিয়ে প্রতারনা করা বৈধ নয়( যেমন কলপ দিয়ে যুবক সাজা, পাত্র সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রদান ইত্যাদি)। অপরপক্ষে মেয়ের পক্ষের ও উচিত নয় এক মেয়ে দেখিয়ে অন্য মেয়ে বিয়ে দেয়া। পাত্রী পক্ষও পাত্রীর ব্যাপারে কোন তথ্য গোপন করবে না । কারন নাবী সাঃ বলেছেনঃ যে কেউ ধোকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”( ইরওয়া গালিল ১৩১৯) পাত্রী পছন্দ না হলে পাত্র বা পাত্র পক্ষ ইঙ্গিতে জানিয়ে দিবে যে এ বিবাহ গড়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। স্পষ্টরুপে পাত্রীর কোন দোষ তার অভিভাবক বা অন্য লোকের সামনে বর্ণনা করবে না। যে উপহার দিয়ে পাত্রীর মুখ দেখেছিল তা আর ফেরত নেওয়া বৈধ নয়, উচিতও নয়। তবে বিয়ে হবেই মনে করে যদি অগ্রিম কিছু মহরানা দিয়ে থাকে তবে তা ফেরত নেওয়া বৈধ এবং পাত্রী পক্ষের উচিত তা ফেরত দিয়ে দেয়া।(ই’লামুল মুআক্কিঈন ২/৫০) বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েমের জন্য কোন দ্বীনদার মানুষ যদি কারো কাছে পরামর্শ নেয় তবে পাত্র বা পাত্রীর দোষ গুন খুলে বলা উচিত।( মিশকাত ৩৩২৪) প্রকাশ থাকে যে যুবতির বয়স হলে উপযুক্ত মোহর, সুপাত্র ও দ্বীনদার বর থাকা সত্ত্বেও আভিভাবক নিজস্ব স্বার্থের খাতিরে অন্যায়ভাবে তার বিবাহে বাধা দিলে সে নিজে কাজীর নিকত অভিযোগ করে বিবাহ করতে পারে।( ফিকহুস সুন্নাহ ২/১২৮) নচেৎ কেবল মাত্র কারো প্রেমে পড়ে, কোন পাত্রের সহিত অবৈধ প্রণয়ে ফেসে বের হয়ে গিয়ে কোর্টে লাভ ম্যারেজ করা কোন অভিভাবককে জানতেও না দেওয়া অথবা তা অনুমতি না নিয়ে বিবাহ করা হারাম ও বাতিল। সাধারণত ব্যভিচারিণীরাই এরূপ বিবাহ করে চির জীবন ব্যভিচার করে থাকে। (মিশকাত ৩১৩১, ইরওয়া গালীল ১৮৪০) কোন পাত্রের ব্যাপারে পাত্রী বা পাত্রী বা পাত্রী পক্ষের অথবা কোন পাত্রীর ব্যাপারে পাত্র বা পাত্র পক্ষের সন্দেহ হলে এবং সম্পর্ক গড়তে সংশয় ও দ্বিধা হলে ইস্তিখারা করলে ফল লাভ হয়। আল্লাহ তার দ্বীনদার বান্দা বান্দী কে সঠিক পথ নির্দেশ করেন (সা না ৩০৫০) বিয়ের আকদ বা বন্ধনের পূর্বে নির্জনতা, স্ত্রীরূপ ব্যবহার প্রভৃতি করা হারাম( মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যা) ২৬/১৩৬)। অবশ্য বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলে তার সহিত স্ত্রীরূপ ব্যবহার করতে পারবে। সমাজে তা নিন্দিত হলেও শরীয়তে তা নিদনীয় নয়(ফাতয়া ইবনে উসাইমিন ২/৭৪৮) বিবাহের পূর্বে পাত্র পাত্রীর রক্ত, বীর্য প্রভৃতি পরীক্ষা করে তারা রোগমুক্ত কিনা তা দেখে নেয়ার সমর্থন রয়েছে ইসলামে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিবাহ (দারস- ৪)

অধ্যায়ঃ বিবাহ (দারস-১)