বিবাহ (দারস-২)

অধ্যায়ঃ বিবাহ
দারস-২
বিয়ে করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের সুন্নতঃ
৯৬৮. আনাস বিব মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী(সাঃ) আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করেন এবন বলেনঃ “আমি কিন্তু সালাত আদায় করি, ঘুমাই, সওম পালন করি, সওম (নফল) রাখি কোন সময়ে ত্যাগও করি, মহিলাদের বিবাহ করি(এসবই আমার আদর্শভুক্ত)। ফলে যে ব্যক্তি আমার তরিকাহ(জীবন যাপন পদ্ধতি) হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই/ সে আমার উম্মাতের মধ্যে নয়। ( বুখারী ৫০৬৩, মুসলিম ১৪০১, নাসায়ী ৩২১৩, আহমাদ ১৩১২২, ১৩৩১৬)
ব্যাখ্যাঃ এর পূর্বে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা থেকে সৃষ্ট ধারনা দূর করে দেয়া হচ্ছে। মুসান্নিফ (রহঃ) সংক্ষেপণকে সামনে রেখে ওটা লোপ করে দিয়েছেন। এর সারমর্ম এই যে, তিনি তিনজন সাহাবীর (রাযিঃ) মধ্যে একজন বলেন যে, তিনি সর্বদা রোযা রাখবেন, ২য় জন বলেন যে, তিনি সারা রাত দাঁড়িয়ে ইবাদাত করবেন এবং ৩য় জন বলেন যে, তিনি কখনও বিবাহ করবেন না। যখন নাবী সাঃ তাদের এই দৃঢ় সঙ্কল্পের কথা জানতে পারেন তখন তিনি তাদের কে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরাই কি এইভাবে কথা বলছিলে? তা হলে জেনে রাখো যে আমি তোমাদের চেয়ে আল্লাহকে বেশি ভঁয় করি এবং তোদের চেয়ে বেশি মুত্তাকী ও পরহেযগার। এতদসত্ত্বেও আমি (নফল) সিয়াম রাখি এবং ছেড়ে দিয়। রাত্রে আমি কিয়ামও করি এবং ঘুমাইও বটে। আর আমি নারীদেরকে বিয়েও করি। এটা আমার আদর্শ। এখন যদি কেউ নিজেই নিজের উপর কিছু বাধ্যতামূলক করে নেয় এবং আমার আদর্শের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে তবে তার সাথে আমার কোন সম্পরক নেই।” এখানে বিবাহের বিষয়টি মুখ্য বিষয়। আল্লহ তাআলা বিবাহ বৈধ করনের হিকমত অনেক যেমনঃ
১. বিবাহ এমন একটি কাজ যা দ্বারা সৎ পরিবেশ ও সুন্দর সমাজ গঠন এবং পারিবারিক বন্ধঙ্কে মজবুত করার ব্যাপারে সাহায্য করে। আর জীবনকে পূত পবিত্র ও হারামে পতিত হওয়া থেকে হেফাজত রাখে। ইহা এক বাসস্থান ও প্রশান্তি। এর দ্বারা সৃষ্টি হয় ভালোবাসা, প্রনয়, মিল-মহব্বত ও সবামী-স্ত্রীর মাঝে বিস্তার লাভ করে প্রফুল্লতা। আল্লাহ তাআলার বানীঃ “আর এক নিদর্শন এই যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পারিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নির্দেশবালী রয়েছে।(সুরা রুম, আয়াত-২১)
২. বিবাহ হচ্ছে সন্তান জন্মের সর্বোত্তম পন্থা এবং বংশ কুল হেফাজতের সাথে সাথে বংশ বিস্তার করার বৈধ পদ্ধতি। এর দ্বারা জন্ম নেয় আপোসের সাথে পরিচিতি, সাহায্য সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব।
৩. বিবাহ হচ্ছে যৌন চাহিদা পূরনের এক উত্তম পন্থা এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালা থকে নিরাপদ থেকে যৌন চাহিদা পূরণ করার একমাত্র বৈধ পথ।
৪. বিবাহ দ্বারা সৎ পরিবার গঠন হয়, যা সুন্দর সমাজের জন্য একটি ভাল বীজ স্বরূপ। স্বামী কষ্ট করে উপার্জন করে, খরচ ও ভরণপোষণ করে আর স্ত্রী সন্তান্দের প্রতিপালন করে এবং সংসার পরিচালনা ও জীবিকা নিয়ন্ত্রন করে। এর দ্বারা সুগঠিত হয় সমাজের অবস্থা।
৫. বিবাহ দ্বারা পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব স্বভাব পরিতৃপ্তি হয় যা সন্তানদের উপস্থিতিতে বৃদ্ধি পায়।
বিবাহের বিধানঃ
১. যার যৌন চাহিদা রয়েছে এবং যেনায় ফেসে যাওয়ার ভয় নেই তার জন্য বিবাহকরা সুন্নত; কারন এর মাঝে রয়েছে নারী-পুরুষ ও উম্মতের অনেক উপকার।
২. যে ব্যক্তি বিবাহ না করলে যেনায় ফেসে যাওয়ার ভয় রয়েছে তার প্রতি বিবাহ করা ওয়াজেব। নব দম্পতি তাদের বিবাহ দ্বারা নিজেদেরকে পূত পবিত্র এবং আল্লাহর হারামকৃত যেনায় পতিত হওয়া থেকে হেফাজতের নিয়ত করবে। এর ফলে তাদের মধুর মিলন হবে সদাকায় পরিণত।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিবাহ (দারস- ৪)

বিবাহ (দারস-৬)

বিবাহ (দারস-৮)